শ্বেতপত্র: ২৮ উপায়ে দুর্নীতি, ১৫ বছরে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার

ট্যাগ: দুর্নীতি, অর্থ পাচার, শ্বেতপত্র, বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, দুর্নীতির প্রক্রিয়া


দুর্নীতির প্রক্রিয়া ও তার মূল উপাদান

বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে যে, গত পনের বছরে দেশে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে ‘চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়েছে, যেখানে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই যুক্ত ছিল।

দুর্নীতির মূল দায়িত্বে ছিল আমলারা

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, দুর্নীতির প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ‘চোরতন্ত্র’ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রেখেছেন আমলারা, যাদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক উভয়ই অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাজ হল চুরির বর্ণনা দেওয়া, তবে যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোয়েন্দা দফতরের কাছে যাওয়াই শ্রেয়।”

গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে দুর্নীতির ঘটনা

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে যে, সরকারী খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ঘটেছে ব্যাংকিং, অবকাঠামো, জ্বালানি এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে। এছাড়া, ১৫ বছরে বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় গড়ে ৭০ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছে প্রকল্পগুলো শেষ করতে।

প্রভাবিত খাতগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য

কমিটি জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর মাধ্যমে ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ, এবং বাজেট বাড়ানোর মতো বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। এর পাশাপাশি, দেশের ব্যাংকিং খাতে যে মন্দ ঋণ সৃষ্টি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।

অভিবাসন খাতে অর্থ পাচার

অভিবাসন খাতে প্রায় সাড়ে তের লাখ কোটি টাকা হুন্ডি লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে। শ্বেতপত্রে বলা হয়, এটি মতিঝিল-উত্তরা রুটের মেট্রোরেল নির্মাণ খরচের চারগুণ।

দুর্নীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা

কমিটির সদস্যরা জানান, দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হয়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার হয়েছে এবং সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি।

সরকারের দায়িত্ব

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত বিবরণ জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত। পরবর্তী ছয় মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের একটি মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা জনগণের কাছে উপস্থাপন করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।


Comments

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।